Home / মিডিয়া নিউজ / ‘আব্বা বললেন, এখনই বাসা ছেড়ে চলে যাও…’

‘আব্বা বললেন, এখনই বাসা ছেড়ে চলে যাও…’

প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে ধরা হয় বাবা দিবস। সেই হিসাবে আজ, ২০ জুন বিশ্ব বাবা দিবস। বিশেষ এই দিবসে বাংলা ট্রিবিউন জানতে চেয়েছে বাবাকে নিয়ে ক’জন তারকার মনের কথা। এখানে উল্লেখ থাকলো নায়করাজ রাজ্জাকের ছোট পুত্র নায়ক সম্রাটের অনুভূতি-

মনে পড়ে ছোটবেলায় বাবার কাছে খেলনার জন্য বেশি আবদার ছিল। যেখানেই যেতাম, খেলনা কেনার বায়না ছিল। এর জন্য আব্বার সঙ্গে অনেক জেদ করতাম। আবার বকাও খেতাম। রিমোর্ট কনট্রোল খেলনা গাড়ির প্রতি আমার ঝোঁক ছিল। এখন আর মনেও করতে পারছি না, কতে কত গাড়ি আব্বা কিনে দিয়েছেন। ভাবলেও এখন অবাক হই।

বড় হওয়ার পর আব্বার সঙ্গে ওভাবে আবদার বা জেদ করিনি। আমার কিছু লাগলে চাইতাম। যদি সেটা পাওয়ার উপযুক্ত মনে করতেন তবেই আব্বা দিতেন। না দিলে বুঝিয়ে বলতেন, কেন সেটা এখন দেওয়া যাবে না। এখন এই বয়সে এসে আব্বাকে হারানোর পর (২৩ জানুয়ারি ১৯৪২-২১ আগস্ট ২০১৭) বুঝি, তিনি যা করতেন সেটা আমাদের ভালো চিন্তা করেই করতেন। কারণ, তার জীবদ্দশায় আমাদের এমন কোনও আবদার রাখেননি, যার কারণে আমাদের জীবন নষ্ট হতে পারতো।

মনে পড়ে ছোটবেলায় আমি আব্বার কোলে কোলে থাকতাম। একটু বড় হওয়ার পর সারাক্ষণ হাত ধরে থাকতাম। আর যখন পুরো বড় হলাম, তখন আব্বা বেশিরভাগ সময় আমার ঘাড়ে হাত রেখেই চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। এই বিষয়টা ভাবলে আমার আজও কী যে ভালো লাগে। খেয়াল করবেন, বেশিরভাগ অনুষ্ঠানের ছবিতে আব্বার হাত থাকতো আমার কাঁধে। বলছি শেষের দিকের কথা।

ছোটবেলা থেকে আব্বাকে বাঘের মতো ভয় পেতাম। আব্বা কোনও কারণে রাগ করে থাকলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যেতো। আরেকটা বিপদ ছিল বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে গেলে। কারণ, উনার নির্দেশ, যেখানেই যাই সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে বাসায় ফিরতে হবে। এই বিষয়টি তখন খুব কষ্ট দিলেও এখন বুঝি তার গুরুত্ব। এটাও ঠিক, অনেক সময় ঠিকই রাত করে বাসায় ফিরতাম, তখন আব্বাকে ম্যানেজ করতো আম্মা। টেরই পেতেন না আব্বা।

মনে পড়ে, একবার ডিনার টাইমে অনেক দুষ্টুমি করছিলাম। তখন আমি বেশ ছোট। আব্বা বকা দিলেন, আমি গুরুত্ব দিইনি। এরপর সব ভাইবোনকে ডেকে বললেন, আমাকে ঘর থেকে বের করে দেবেন! বললেন, ‘এখনই বাসা ছেড়ে চলে যাও!’ তখন ভাই-বোন-মা বারান্দায় চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি হাঁটতে হাঁটতে বাসার গেটের দিকে যাচ্ছি। আব্বার ভয়ে আমাকে কেউ ডাকতেও পারছে না। আমিও থামতে পারছি না। ভেবে পাচ্ছিলাম না বাসা থেকে বের হয়ে কই যাবো, কী করবো! এরপর আব্বা নিজে এসেই কোলে করে ঘরে নিয়ে গেলেন। সেদিন আমি জীবনের সেরা ভয়টা পেয়েছিলাম।

আব্বা চলে যাওয়ার পর সব সময়ই তাকে মিস করি। তবে খাবার টেবিলে বসলে বেশি মিস করি। কারণ, এই টেবিলে বসেই আমাদের অনেক গল্প হতো। সারা দিন আমরা কে কী করেছি, কাল সারা দিন কী করবো- সব আলাপ এই খাবার টেবিলে হতো। আব্বা আর আমি রোজ সকালে একটা ডিম অমলেট দুজনে ভাগ করে খেতাম। এটা ছিল আমাদের রুটিন। আব্বা নিজের ডিম থেকে অর্ধেক নিয়ে বাকিটা আমার প্লেটে দিতেন। সেটি তো আর এখন দেয় না কেউ। এসব ভাবলে খুব কষ্ট হয়, খুব।

আব্বা আমার কাছে পুরো দুনিয়া। একজন বাবা তার সন্তানদের মানুষ করার জন্য কত স্যাক্রিফাইস করে, সেটা তিলে তিলে অনুভব করছি নিজে যখন বাবা হয়েছি। তাই বাবা-মাকে খুশি রাখার চেয়ে উত্তম কাজ আর কিছু নেই। আজ আব্বা পাশে নেই, তবে প্রতি মুহূর্তে তাকে স্মরণ করি। ফজরের নামাজ পড়ে রোজ তাঁর কবরে যাই। বলি, আব্বা আপনার হাতটা আমার কাঁধে রাখেন না কতদিন হলো…।

অনুলিখন: মাহমুদ মানজুর

Check Also

আবারও ডি এ তায়েবের নায়িকা মাহি

নতুন আরও একটি সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। সেই সিনেমার নাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *