Home / মিডিয়া নিউজ / ৩৪ বছরে ২ হাজার ‘সিনেমার পুলিশ’ কামরুল!

৩৪ বছরে ২ হাজার ‘সিনেমার পুলিশ’ কামরুল!

ছবির মানুষটিকে চেনা যায়? একটু ভেবে বলুন তো, কে উনি! বাংলা সিনেমা যারা দেখেন, তারা হয়তো একটু খেয়াল করলেই তার মুখটি দেখেই চিনবেন! ঠিক ধরেছেন। তাকে দেখছেন চলচ্চিত্রের পর্দায়। শেষ দৃশ্যে অথবা মারামারির পরে ভিলেনদের পুলিশ ধরতে আসেন; তখন ‘সেন্ট্রি, অ্যারেস্ট হিম’ বলার সঙ্গে সঙ্গে হাতকড়া নিয়ে ছুটে ভিলেন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গ্রেপ্তার করতে এই মানুষটিকে দেখা যায়।

কিন্তু কখনই তার মুখে শোনা যায় না কোনো সংলাপ। তার নাম কামরুজ্জামান কামরুল। যিনি এফডিসির কামরুল বা এফডিসির পুলিশ কিংবা পুলিশের পোশাক সরবরাহকারী ‘কস্টিউম কামরুল’ নামে পরিচিত।

এফডিসির কড়ইতলায় কামরুলের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল সেদিন। ইশারায় দেখাচ্ছিলেন, পাশেই তার পোশাক রাখা গুদামঘর। গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের পোশাকে ঠাসা পুরো রুম। পুলিশের সব ধরনের পোশাকের যাবতীয় সরঞ্জাম রয়েছে তার কাছে।

চ্যানেল আই অনলাইনকে কামরুল জানান, তার কাছে কয়েক’শ পুলিশের পোশাক রয়েছে। শুটিংয়ে পুলিশের চরিত্র সরবরাহ করার জন্য তার তত্ত্বাবধানে শতাধিক জুনিয়র আর্টিস্ট কাজ করেন। অনেকসময় শোনা যায়, পুলিশের পোশাকে ভুয়া পুলিশ ছিনতাই করে থাকে। তবে কামরুল বলেন, আমার ৩৪ বছর চলচ্চিত্র জীবনে এই ধরনের অসৎ কাজ কোনোদিন করিনি।

কথায় কথায় কামরুল জানান, ১৯৮৮ সালের পর তিনি তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময় এফডিসিতে শুটিং দেখতে এসেছিলেন। তার ভাষ্য, স্পষ্ট মনে আছে রোজিনা ম্যাডামের গাড়িতে প্রথমদিন এফডিসিতে এসেছিলাম। উনি তখন ইকবাল রোড থাকতেন। আমার এক আত্মীয়র সাথে রোজিনা ম্যাডামের ভাইয়ের বন্ধুত্ব ছিল। সেই সুবাদে শুটিং দেখতে এসেছিলাম।

তখন সিনেমার শুটিংয়ে এফডিসিতে প্রচুর ভিড় থাকতো। সেসময় আজাদ নামে একজনের সাথে পরিচয় হয় কামরুলের। তিনি বলেন, আজাদ ভাই ও আমার দুজনের বাড়ি ফরিদপুর। সেই সুবাধে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এরপর এফডিসিতে নিয়মিত যাতায়াত হতো। আজাদ ভাই আমাকে পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করতে বলেন। ধীরে ধীরে আমি এফডিসিতে নিয়মিত কাজ করতে থাকি।

”কিছুদিন পর বুঝতে পারি পুলিশের অভিনয় ও পোশাক সাপ্লাই দেয়ার কাজটি নিজেই করতে পারি। ততদিনে সবাই আমাকে চিনেছে। যতদূর মনে পড়ে রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম সিনেমা করেছিলাম। নায়িকা ছিলেন কবিতা। আজ থেকে ৩২ বছর আগের কথা। ঠিক মনে নেই। এরপর একের পর এক ছবি করতে থাকি। ১৯৮৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার সিনেমায় পুলিশ হয়েছি।”

”গত ২৫ বছর সিনেমা নাটকে যত পুলিশের চরিত্র লেগেছে শতকরা ৯০ ভাগ আমার হাত দিয়ে গেছে। এই সময়ে আমি টুকটাক অভিনয় করে গেছি। পাশাপাশি হাসপাতালের কস্টিউম থেকে সিনেমা তৈরি করতে যা যা লাগে সব পোশাক আমি ভাড়া দেই।”

গত ৩৪ বছরে ২ হাজারের বেশি সিনেমায় পুলিশ হয়েছেন বলে জানালেন কামরুল। তার কথা, তিন দশক ধরে রাজ্জাক, শাবানা, কবরী, রোজিনা থেকে জসিম, রুবেল, সালমান শাহ, মান্না, রিয়াজ, শাকিব খান সবার সঙ্গে কাজ করেছি। প্রত্যেকের কাছে স্নেহ পেয়েছি। অভিনয়ও করেছি। তবে ২ হাজার সিনেমা করলেও সেভাবে সংলাপ ছিল না। থাকলেও কম সিনেমাতে খুব ছোট্ট সংলাপ।

অতীত ও বর্তমান সিনেমার অনেককিছুর সাক্ষি এফডিসির কামরুল। তিনি বললেন, আগে দেখেছি সবাই কাজ পাগল ছিলেন। অভিনয় করে কীভাবে মানুষের মন জয় করা যায় সেই চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখনকার জেনারেশনের কেউ সেভাবে তার কাজটাকে ভালোবাসে না। দু’পাঁচ বছরে যেসব নায়ক নায়িকা চলচ্চিত্রে এসেছে, এসেই নিজেদের বড় তারকা মনে করে।

সবশেষে কামরুল বলেন, গত ৩৪ বছরে যত শিল্পী সিনেমা করেছেন সবাই আমাকে পছন্দ করেন। তাদের মতো বড় বড় শিল্পীরা আমাকে ভালোবাসেন এটাই আমার প্রাপ্তি। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে আমার তেমন কোনো কষ্ট নেই। একজীবনে যা কিছু পেয়েছি তাতে আমি সন্তুষ্ট।

Check Also

আবারও ডি এ তায়েবের নায়িকা মাহি

নতুন আরও একটি সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। সেই সিনেমার নাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *