Home / মিডিয়া নিউজ / ‘হল থেকে ঠিকমত টাকা ফেরত দিক, আমরা কনটেন্ট দেব’

‘হল থেকে ঠিকমত টাকা ফেরত দিক, আমরা কনটেন্ট দেব’

১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হচ্ছে দেশের সব সিনেমা হল। সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে এমন সিদ্ধান্তই জানালেন প্রদর্শক সমিতির নেতারা। এমন ঘোষণার পর থেকেই চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

প্রদর্শক সমিতির এমন সিদ্ধান্তে নিজের মতামত জানিয়েছেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা বুলবুল বিশ্বাস। যিনি শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, আনিসুর রহমান মিলন অভিনীত ‘রাজনীতি’ ছবির পরিচালক। ২০১৭ সালের ২৬ জুন ঈদে মুক্তি পেয়েছিল ‘রাজনীতি’। মৌলিক গল্পের সিনেমা ‘রাজনীতি’ নির্মাণ করে পরিচিতি পেয়েছিলেন বুলবুল বিশ্বাস।

”সত্যিই যদি সিনেমা হল বন্ধ হয়, তাহলে এটা আমাদের জন্য সুখবর। কারণ এ রকম গোডাউন বন্ধ হয়ে যাওয়াই ভালো। হল মালিক বা প্রদর্শক সমিতির কাছে আমার প্রশ্ন, বিভিন্ন খাতে (টিকিটে লেখা থাকে) আপনারা সবধরণের খরচ দর্শকদের কাছ থেকে নেন। যেমন- সাধারণ মানের একটা হলের কথাও যদি বলি, সেই হলের টিকেটে লেখা থাকে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ বাবদ এতো টাকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ এতো টাকা; কিন্তু কোথায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ? কোথায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা? একটা ফ্যান চলে না, লাইট জ্বলে না, টয়লেটে যাওয়া যায় না দুর্গন্ধের জন্য। তাহলে আপনারা টাকাটা নিয়ে করছেন কী?”

সিনেমা হল যারা চালান, তারা তাদের জায়গা থেকে সৎ না। তাহলে কিসের ব্যবসা করবেন? একটা ব্যবসায়ীর প্রথমত সততা থাকা উচিৎ। আমার জেলা শহর কুষ্টিয়ায় একটা হল (বনানী) এখনও আছে। একমাত্র সেই হলে বর্ষার সময় পানি উঠে নিচতলা পুরো ডুবে যায়। এরপরও কিছু দর্শক গিয়ে টিকেট কেটে সিনেমা দেখে। এখন আমার কথা হচ্ছে, তারা প্রতিটি খরচ বাবদ টাকা নিচ্ছে, কিন্তু সেই টাকার ব্যবহার কী করছেন? সিনেমা হলের মালিকরা কোনো সেবাই দেবেন না, আবার আমরা সিনেমা মুক্তি দিতে চাইলে সেটার জন্য প্রজেক্টর ভাড়াও দেয়া লাগবে। তাহলে আপনি হল মালিক হয়ে করছেনটা কী?

আপনার হল, আপনার প্রজেক্টর, ভাড়াটা কেন আমরা নির্মাতারা দেবো? সিনেমা হল মালিক মানে হলো তার একটা হল থাকবে; যেখানে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য সবধরণের সুব্যবস্থা থাকবে। সেটার বিনিময়ে আমরা সিনেমা নির্মাণ করে তাদের দেব। এরপর দর্শক টিকেট কেটে সেটা দেখবে। এখন দর্শকও টিকেটের টাকা দেয়, আমরা উল্টো প্রজেক্টরের ভাড়া দেই। এরপরও আপনারা হলের পরিবেশ ঠিক করছেন না। তাহলে এই হলগুলো থাকা না থাকা তো সমান কথা। সুতরাং বন্ধ হয়ে যাক।

সিনেমা হলের মালিক (প্রদর্শক সমিতি) চাচ্ছে বাইরের সিনেমা আসুক, দেশের সিনেমার সংকট তাই বিদেশের সিনেমা আসলে নাকি তাদের ব্যবসা ভালো হবে! দেশের ছবির এই সংকট তো তারাই তৈরি করে রেখেছে। একটা উদাহরণ দেই। আমার প্রথম সিনেমা ‘রাজনীতি’ মুক্তির আগে হার্টবিট প্রোডাকশনের ‘লাভ ম্যারেজ’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। ব্যবসা সফল সিনেমা এটা। কিন্তু এই সিনেমার টাকা এখনো হল মালিকদের কাছ থেকে পাননি প্রযোজক। দিচ্ছি, দেবো করে করে প্রযোজককে ঘুরানো হচ্ছে।

হল মালিকরা পাওনা টাকাটাও ঠিকভাবে দেন না, তাহলে প্রযোজকরা সিনেমা বানাবেন কীভাবে? আমার ‘রাজনীতি’র টাকা এখনো হল মালিকদের কাছে পাই। তাহলে কোথা থেকে নতুন সিনেমা বানাবো? একটা টিকিটের দাম যদি হয় ১০০ টাকা, তার মধ্য থেকে ৫০-৬০ টাকা নানাবিধ খরচ বাবদ আগেই কেটে রাখা হয়। এরপর বাকি টাকা থেকে ভাগ হয়। যার ফলে প্রযোজকের হাতে আসে মাত্র ১০ টাকা, আর তাদের পকেটে যায় ৪০-৫০টাকা। সেই সামান্য টাকাটাও তারা ঠিকমতো দেন না। তাহলে আমরা কীভাবে কনটেন্ট বানাবো? তাছাড়া হাউজফুল শো গেলেও তারা বলে, দর্শক নেই।

১০০ টা টিকেট বিক্রি হলে তারা বলে ৩০ টা বিক্রি হয়েছে। এই দিক দিয়েও তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা নেই। আমি বলছি, তারা আমাদের বকেয়া টাকা সময়মতো দিয়ে দিক, আমরাও সময়মতো কনটেন্ট দেবো। প্রযোজকদের বকেয়া টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দিক, তাহলে প্রযোজকরা নতুন সিনেমা বানাবে। সুতরাং ভারতের সিনেমা আমদানির তো দরকারই পড়ছে না। আপনারা বকেয়াও ফেরত দেবেন না, আবার নতুন সিনেমাও চাইবেন, সেটা তো সম্ভব না। সিনেমা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম। এটা কেউ আটকে রাখতে পারবে না। আমার ‘রাজনীতি’ সিনেমা আটকে দেয়ার জন্য কত কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু আটকে রাখতে পেরেছে? পারেনি। বরং দর্শকই সব জবাব দিয়ে দিয়েছে।

যত কিছুই হোক, মানুষ তার বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখবেই। সুতরাং কোনো নির্দিষ্ট গোষ্টির জন্য জনগণের এই বিনোদনের মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাবে না। তারা হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছে। প্রযোজক বা পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করেনি। কেন করেনি? কারণ আলাপ করতে গেলেই তো বকেয়া টাকা দিতে হবে। কারণ তারা নিজেরাই তো অন্যায় করে বসে আছে।

এখন যদি ই-টিকেটিং চালু করা হয়, তাহলে অন্তত স্বচ্ছতা আসবে। আমাদের দেশের সব সেক্টরে ডিজিটালাইজেশন এসেছে। বাস বা ট্রেনে বাড়ি যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকেট কাটা যায় এখন। ঘরে বসে ই-কমার্সের মাধ্যমে কাঁচা বাজার পর্যন্ত করছি। সব দিকেই ডিজিটাল সিস্টেম এসেছে। তাহলে কেন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো সরকারের সুদৃষ্টি নেই?

Check Also

আবারও ডি এ তায়েবের নায়িকা মাহি

নতুন আরও একটি সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। সেই সিনেমার নাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *