





নায়িকারা হুট করে ব্যবসায়ী বনে যান! অবাক হওয়ার বিষয় না?এত বড় ব্যবসা খোলা চাট্টিখানি কথা!






এক ব্যবসায়ী আলাপ করতেছিলেন সেদিন। ব্যবসা শুরু করতে তাঁর কত ঝাক্কি পোহাতে হয়েছে। অথচ নায়িকারা?






ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে উঠতি নায়িকারা এখন সিনেমা নির্মাণে অর্থ লগ্নি করছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ






আবার নিজের অভিনীত প্রথম ছবি মুক্তির আগেই প্রযোজক বনে যাচ্ছেন! আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার থেকে না এলেও সিনেমায় অর্থলগ্নির নেপথ্যে অনেকের বেলায় রয়েছে ভিন্ন ইতিহাস।
বিশ্বের কম বেশি প্রায় সব দেশেই নায়িকারা প্রযোজক হয়েছেন বা হচ্ছেন। ইতালির মনিকা বেলুচি বা হলিউডের অ্যাঞ্জেলিনা জোলিরা ছবির প্রযোজক হন ছবির শেয়ার মানি হোল্ডার হিসেবে। আমাদের দেশে ‘প্রযোজক আর লগ্নিকারী স্বত্বা’। এই দুটি জিনিস যে আলাদা সেটাও বোঝার মতো ক্ষমতা নেই কারও! একজন প্রযোজক কখনও নিজের গাঁটের পয়সা ইনভেস্ট করেন না। কিন্তু প্রযোজক সব অর্থ জোগান দেন, তার ব্র্যান্ড ভ্যালুর খাতিরে। তার প্রভাবেই বা তার প্রতি আস্থা রেখেই লগ্নিকারীরা অর্থ বিনিয়োগ করেন।
অথচ অবাক করার মতো বিষয় হল আমাদের দেশে যারা প্রযোজক এবং লগ্নিকারী তারা সবাই নবাগত। তাও আবার তারা উঠতি নায়িকা। যাদের ক্যারিয়ারে এখনও কোনো অবস্থান তৈরি হয়নি! তাদের প্রতি ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে কোন মোহে আস্থা রাখছেন সেটাই প্রশ্ন সাপেক্ষ। কী তাদের অর্থের উৎস? এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।
ববির কথাই ধরা যাক। ক্যারিয়ারে নেই কোন হিট ছবি। অথচ তিনি এখন প্রযোজক এবং লগ্নিকারী হিসেবে ঢাকঢোল পিটিয়ে মহরত করছেন নিজের ছবির। অর্থবিত্ত নেই ব্যক্তি কিংবা পারিবারিক জীবনে। এ যদি হয় অবস্থা, তবে প্রশ্ন থেকে যায় তার আয়ের উৎস কী? নির্মাতা ইফতেখার চৌধুরীর সঙ্গে লিভ টুগেদার করেন, এটা ইন্ডাস্ট্রিতে কারো অজানা নয়।
ববির চেয়ে নাজুক অবস্থায় মিষ্টি জান্নাত। অনেকে হয়তো নামও জানেন না এই নবাগত নায়িকার। নামকাওয়াস্তে দু-একটি সিনেমা রিলিজ হয়েছে। এর মধ্যেই তিনি একাধিক ছবির প্রযোজক বনে গেছেন। যদিও বলে থাকেন, বাবার অর্থেই সিনেমার লগ্নিকারী, দামি গাড়িতে চড়ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কি এতটাই লাভজনক যে তার পৈতৃক অর্থ লগ্নি করে একাধিক ছবিতে বিনিয়োগ করা যায়? কিংবা বাবার কী পরিমাণ অলস বৈধ অর্থ পড়ে আছে, যেটা জলে ফেলে দিলে কোনো সমস্যা হবে না? এটা কি একজন উঠতি অভিনেত্রীর সঠিক আচরন? অপরদিকে বিভিন্ন উঠতি নায়িকাদের তার সিনেমায় নেয়ার আশ্বাসও তিনি দিয়ে থাকেন।
অনৈতিক আর বেপরোয়া জীবনের বাসিন্দা দিপালীও এখন ছবির লগ্নিকারী। লাবন্য লীর ক্যারিয়ারে এখনও ‘চিত্রনায়িকা’ শব্দটি যোগ হয়নি। অথচ তিনিও ছবির প্রযোজক ও লগ্নিকারী! তানহা মৌমাছিও প্রযোজক। এ অভিনেত্রীকে চিনেন আপনি? তাকে ফিল্মে আনার প্রধান সহযোগী ছিলেন, সেই অভিনেতা প্রযোজক ফিরোজ শাহী নিজেই বলেছেন, যে ঢাকা শহরে তানহা মৌমাছির একটি থাকার জায়গাও ছিল না। ভাড়া বাসায় জীর্ণ অবস্থায় কাটত দিনরাত। অথচ কোনো ছবি রিলিজের আগেই এখন জিপ হাঁকাচ্ছেন!
পরীমনির বেলাতেও সেই কথা বলা যায়। আজ অব্দি হাতেগোনা কয়েকটি ছবি রিলিজ হয়েছে মাত্র। অথচ তাকে ছবিতে কাস্ট করলেই নাকি বিশেষ লগ্নিকারী অর্থ জোগান দেন। অস্পষ্ট প্রযোজক হিসেবেই থাকেন পরী! কোটি টাকার ফ্ল্যাট-গাড়ি রয়েছে তার। আর এত অর্থের উৎস আপনি কী করে মেলাবেন। তা যে কোনো সৎ ব্যবসায়ী বা বিশ্বের সেরা গণিতবিদেরাও হার মানবেন!
নিজ নামে ফ্যাশন ব্র্যান্ড চালু করেছেন মডেল-অভিনেত্রী সুজানা জাফর। রাজধানীর বনানীতে ‘সুজানা’স ক্লোজেট’ নামের একটি ফ্যাশন হাউজ শুরু করলেন গত বছর। রাজধানীর বনানীর ১১ নম্বর সড়কে ফ্যাশন হাউজটি অবস্থিত। বিশাল এ ফ্যাশন হাউজে মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, শাড়িসহ অনেক পোশাক পাওয়া যাবে। আর এই পোষাকগুলো পাকিস্তান, ভারত থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছে। কথা হলো, সুজানার এত অর্থ কোথা থেকে আসলো?
নায়িকা নিপুন একের পর এক ব্যবসা খুলে বসছেন। বর্তমান সময়ে তার ব্যস্ততা এখন সেদিকেই বেশি। অভিনয়ের পাশাপাশি নারীদের রূপচর্চা বিষয়ক ‘টিউলিপ নেইলস অ্যান্ড স্পা’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলছেন। বড় বোন পলিন নার্গিস ও একমাত্র মেয়ে তানিশা এখন লন্ডনে থাকেন। সেখানেও একটি খাবারের দোকান চালু করেছেন এ নায়িকা।
চলচ্চিত্রে এসেছেন বেশিদিন হয়নি চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহির। এরইমধ্যে ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘স্করপিয়ন’-এর পাশাপাশি একটি ফ্যাশন হাউজের মালিকও তিনি।
নিরেট জলের মতো অনেকের কাছে অনেককিছু্ স্পষ্ট। নায়িকারা ঠিক কত টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন? কেউ কী জানি? জানেন না! আর নিজের অভিনয় করা একটি ছবিতে কত টাকা সম্মানী পেলে, এরপর কতটি ছবি বা নাটক করলে এক কোটি টাকা (আনুমানিক) বাজেটের একটি ছবিতে বা এইরকম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা যায়? প্রশ্ন ওঠে, আয়ের উৎস কী? এত অর্থ তিনি পেলেন কোথায়? প্রশ্ন যখন জবাবহীন হয়ে পড়ে, দুর্নীতি বা অনৈতিক চর্চা যখন তাদের গোড়ায় থাকে, তখন ইন্ডাস্ট্রির হাল যে বেহাল হচ্ছে দিনকে দিন তা বলাই যায়।
সূত্রঃ জানা অজানা