





বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৭০ ও ৮০ দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা। ববিতার আসল নাম ফরিদা






আখতার পপি। আদি নিবাস যশোর। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রতিভাময়ী অভিনেত্রী। ঢাকার গেন্ডারিয়াতে তাঁর বেড়ে ওঠা।






ববিতার মা ডাক্তার হওয়াতে তিনি চেয়েছিলেন মেয়েকে ডাক্তার বানাতে। মানুষ চায় এক হয় আর এক। ববিতার ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। জহির রায়হান প্রয়োজিত সিনে ওয়ার্কশপের ব্যানারে নির্মিত ”সংসার” নামক ছবির মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে আগমন ১৯৬৮ সালে। তিনি রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে জহির রায়হানের “জ্বলতে সুরুজ কি নিচে” ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম হয়ে যায় ববিতা। ১৯৬৯ সালে “শেষ পর্যন্ত” ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন।
৭০ এর দশকে শুধুমাত্র অভিনয় দিয়ে তিনি ঐ দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
ববিতা
অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তিনি সত্যজিৎ রায়ের “অশনি সংকেত” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। ববিতা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচন্দা এবং চম্পার বোন।
তিনি ২০০ এর ও বেশী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি অনন্ত প্রেম, বাঁদী থেকে বেগম, বসুন্ধরা, আলোর মিছিল, আবার তোরা মানুষ হও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ডুমুরের ফুল, গোলাপী এখন ট্রেনে, নয়নমণি, পোকামাকড়ের ঘরবসতি, সুন্দরী, রামের সুমতি ইত্যাদি অসংখ্য ব্যবসা সফল ও শিল্পসম্মত ছবিতে অভিনয় করেছেন। বাণিজ্যিক ও শিল্প এ দু’ধারার চলচ্চিত্রেই সমানভাবে সফল ছিলেন ববিতা। গ্রামীণ, শহুরে কিংবা সামাজিক সব ধরণের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেন।
স্বাধীনতার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে রুচিশীল, সামাজিক ছবি মানেই ছিল ববিতা। জহির রায়হান পরিচালিত “টাকা আনা পাই” ছবিটা তাঁর জন্য ছিল টার্ণিং পয়েন্ট। এরপর তিনি নজরুল ইসলামের ”স্বরলিপি” ছবিতে অভিনয় করেন যা ছিল সুপারহিট। নায়িকা হিসাবে তাঁর স্বাতন্ত্র্যবোধ ছিল লক্ষণীয়। অভিনয়, গ্ল্যামার, পর্সোনালিটি, নৃত্য কুশলতা সবকিছুতেই তিনি ছিলেন পারদর্শী।
ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত দূরদেশ, মিস লংকাসহ কয়েকটি ছবিতে ববিতা অভিনয় করেছেন। তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম তিন কন্যা। তিনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। ২০০২ সালে তিনি হাছন রাজা ছবিতে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তিনি মা-ভাবীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। ববিতার একমাত্র ছেলে অনীক কানাডায় পড়াশোনা করছেন।
ববিতা পরপর তিন বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত ছবিতে অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফিল্ম এসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান। অশনি সংকেত ১৯৭৩ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বেয়ার পুরস্কার পেলে আন্তর্জাতিকভাবে ববিতাও খ্যাতিলাভ করেন।এছাড়াও সরকারী ও বেসরকারী অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাঁকে ”পুরস্কার কন্যা” বলা হত। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বর্তমানে ববিতা ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজসেবা মূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি নারীর উপর এসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তিনি নারী ও শিশুদের অধিকারের জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। শিশুদের টীকাদান কর্মসূচীর প্রচারে তিনি অংশ নিচ্ছেন। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসায় ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া দুস্থ শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠনের শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।