





প্রায়ই বিভিন্ন জায়গার মিলাদে মোনাজাতের সময় হুজুরদের বলতে শুনেছি এবং শুনি “হে আল্লাহ,






আপনি পৃথিবীর সকল মুসলমানদের মাফ করে দেন, মুসলিম সমাজে শান্তি বর্ষণ করেন, মুসলমানদের






রক্ষা করেন, মুসলমান ভাই বোন যারা মারা গেছেন তাদের বেহেস্ত নসীব করুন ” ইত্যাদি । কিছুদিন






আগে সংগীতশিল্পীদের এক মিলনমেলা হয়ে গেল। যেখানে আমরা আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়া শিল্পীদের






আত্মার শান্তি এবং অসুস্থ শিল্পীদের সুস্থতার জন্য দোয়ার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু যেই হুজুর এসে আমাদের মোনাজাত করালেন, তিনিও একই সুরেই কথা বললেন। মোনাজাত করতে গিয়েও আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছিল। মনে হচ্ছিল আমিও বুঝি কেবল মুসলিম শিল্পীদের জন্যই দোয়া করছিলাম। হয়ত আমার মত অবস্থা কারো কারো হয়েছে, অথবা অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে খেয়ালই করেননি হুজুর কি বলছেন। কিন্তু কেউ মুখ ফুটে বলেননি এবং মনে মনে আমার মতই দোয়া করেছেন ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য…
আমি একজন শতভাগ বিশুদ্ধ আস্তিক মানুষ এবং ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যতটা আল্লাহ সামর্থ দেন, চেষ্টা করি ইসলামের বিধিনিষেধ যতটা সম্ভব সম্ভব মেনে চলার। পবিত্র কোরান শরীফ বাংলায় পড়ি বলে এটাও জানি যে কোরানের কোথাও লেখা নেই যে নিজ ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্মের মানুষের জন্য দোয়া করা যাবেনা৷ তাই যতদিন বাঁচবো, কেবল মানুষ নয়, আল্লাহতায়ালার সৃষ্ট সকল “উপকারী” জীবের জন্য দোয়া করব। মানুষ আমার কাছে কেবলই “মানুষ”। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান নয়। মানুষ আমার কাছে শুধুই ভালো এবং খারাপ মানুষ।
যে সমাজে ধর্মগুরুরা কেবল নিজ ধর্মের মানুষের গুনাহ মাফ,মুক্তি আর শান্তির জন্য দোয়া চায় এবং এর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য একজনও সামনে এসে দাঁড়াতে সাহস পায় না, সেই সমাজে ধর্ম কোন জীবনবিধান নয়। কোন সংস্কৃতি নয়। শান্তির প্রতীক নয়৷ এমন সমাজে ধর্ম কেবলই এক অদৃশ্য ভারী পাথর, যার নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষগুলোর বিবেক একটু একটু করে রঙ বদলে হলদে, কুৎসিত হয়ে মরে যায়। অথবা কোন এক মরণব্যাধিতে পরিণত হয়ে কুড়ে কুড়ে খেয়ে ফেলে সমাজের নৈতিকতা আর মানবতার শেকড়, ডালপালা, ফুল, ফল… আর এমন সমাজের মানুষেরাই নিজ ধর্মের উপাসনালয়ে নিহত মানুষ আর অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে নিহত মানুষদের জন্য ভিন্নভাবে শোকানুভব আর প্রকাশ ঘটাতে শেখে… যেহেতু সেদিন আমি হুজুরের সাম্প্রদায়িক দোয়ার প্রতিবাদ করতে পারিনি, সেহেতু আমিও এই অসুস্থ, ধর্মান্ধ সমাজের পতাকাবাহী হয়ে গেলাম নিতান্ত অনিচ্ছায়। বিবেকের তাড়নায় ভুগছি এখন…
হায়রে মানুষ… কেউ ধর্মান্ধ আর কেউ নাস্তিক। অথচ আসল শান্তি ধর্মপরায়ণতায়। সে যে ধর্মই হোক না কেন। কবে বুঝবো আমরা???
পরিচিতি: সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার, এটিএন বাংলা