Home / মিডিয়া নিউজ / ঢাকার মতো ওসব শহরে মায়া নেই!

ঢাকার মতো ওসব শহরে মায়া নেই!

জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার ইস্কাটনে। স্কুল-কলেজ সিদ্ধেশ্বরী গার্লস। স্কুল-কলেজের সময়টায় বেইলি

রোডেই বেশি আড্ডা দেওয়া হতো। সেখানকার ফুচকা ছিল তাঁর ভীষণ প্রিয়। তখনকার ঢাকা কেমন

ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে আশা বলেন, ’প্রথমত, পরিবেশ নিয়ে বলতে পারি। তখনকার ঢাকা অনেক

বেশি নিরাপদ মনে হতো। আপন মনে হতো। এত এত খারাপ ঘটনা ঘটত না কিংবা আমরা ছোট

ছিলাম বলে জানতাম না। তা ছাড়া ঢাকাটা অনেক বেশি সাদামাটা ছিল। এত এত রংচং মাখানো মার্কেট ছিল না। চেনা-পরিচিতির গণ্ডিটা অনেক বেশি ছিল। পরিবারের মতো সবাই সবার কুশল বিনিময় করত। এই যেমন—আমরা বাসা থেকে বের হলেই আংকল-আন্টিদের সালাম দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম। সেটি ছিল আমাদের একটা সংস্কৃতি। আমাদের মানতেই হতো। না হয় কথা উঠত, ওই মেয়েটা তো বেয়াদব। এই যে ভয়, সেটি অনেক মিস করি বড় হয়ে।

শিল্প-সংস্কৃতির পরিবেশ হিসেবে তখন ইস্কাটন-মালিবাগ-কাকরাইল—এই জায়গাটা ছিল বেশ হৈচৈ ফেলানো। অনেকটা তাঁরও মনে আছে। ’আমাদের ওখান থেকে তো কাকরাইল ছিল কাছে। ওখানটায় ছিল সিনেমার সব কিছু, এমনকি গানের স্টুডিওতে ভরা ছিল মগবাজার-মালিবাগ। আমাদের সঙ্গে প্রায়ই স্টারদের দেখা মিলে যেত। এ নিয়ে আবার গল্প বলতাম স্কুলে গিয়ে। ক্লাসের অনেকে অন্য এলাকায় থাকত। তাদের আবার খুব আগ্রহ ছিল ওনাদের দেখার। আমাদের গল্পগুলো আগ্রহ নিয়ে শুনত,’ বললেন তিনি।

আশা আরো যোগ করেন, ’আমাদের সময় আনন্দ-প্রমোদ আর ছুটির দিন বলতে বুঝতাম চিড়িয়াখানা কিংবা শিশু পার্ক। এখন এই চলটা নেই। শিশুদের জন্য কেন জানি এই শহরের কেউ কিছু ভাবে না! আমার ছোট কাজিনদের দেখি বাসায় বসে থাকে। সারাক্ষণ টিভি আর অনলাইনে ব্যস্ত। ওরা এটা না করে একটা নির্দিষ্ট সময় যদি বাইরে ঘোরাঘুরি কিংবা খেলাধুলা করতে পারত, মানসিক বিকাশের জন্য এটা অনেক বেশি কার্যকর হতো বলে আমার মনে হয়। আমাদের সময় নাচ-গান শেখার জন্য অনেক স্কুল ছিল। সেগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়!’

তখনকার ঢাকার সাংস্কৃতিক পরিবেশটা কেমন ছিল? ’সাংস্কৃতিক পরিবেশটা তখন অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন ছিল; কিন্তু প্রসারিত ছিল না! আমার কাছে যেটা মনে হয়, এখন যেমন আমরা সব বিশেষ দিনে ম্যাচ করে পোশাক পরি, তখন এমনটা ছিল না। আমরা করতাম না বলে যে অন্যরা করত—এমনটা নয়। এখন তো বিশেষ দিনগুলো অনেক বেশি সেলিব্রেট হয়। পোশাক-আশাকও অনেক বেশি মেপে পরেন। তখন সাজুগুজু নিয়ে এত বেশি আগ্রহ ছিল না। আমরাই তো কোনো একটি অনুষ্ঠান হলে নতুন যে জামাটা ছিল, সেটা পরে হাঁটা দিতাম। এত এত ম্যাচিং ছিল না। এখন সবাই ফ্যাশনসচেতন। আগে যাঁরা শোবিজে কাজ করতেন, তাঁরাই ফ্যাশন অনেক বেশি প্রমোট করতেন। মানে নায়ক-নায়িকারা একেকটা ফ্যাশন নিয়ে আসতেন; কিন্তু এখন তো আমরা বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি। ’

আপনার চোখে বর্তমান ঢাকা কেমন? ’আমরা একটা সময়ে ইস্কাটন ছেড়ে বসুন্ধরায় চলে আসি। এ জায়গাটা ওখানকার মতো না। ওখানে যেমন মানুষজনের ভিড় থাকত, বাসাগুলো কাছাকাছি আর পরিচিত ছিল; এখানে তা অনেকটাই ভিন্ন। সবাই সবার মতো। কেউ কাউকে পাত্তা দেয় না। রাস্তাঘাটে যে জ্যাম! তখন এমনটা ছিল না। রিকশা তখনো ছিল; কিন্তু এত বেশি প্রাইভেট গাড়ি ছিল না। তাই জ্যামটা কম ছিল মনে হয়। ’

ঢাকাকে ভবিষ্যতে কেমন দেখতে চান? ’এই ঢাকায়ই যেহেতু আমাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা, তাই এই শহরটা আমার কাছে অনেক বেশি আপন। বিশ্বের অনেক শহর ঘুরেছি, তার চেয়ে আমার শহর অনেক সুন্দর। ঢাকার মতো ওসব শহরে মায়া নেই! ঢাকায় এত জ্যাম। বিশ্বের বড় অনেক শহরেই এমন জ্যাম হয়; কিন্তু সেসব দেশের কিছু সিস্টেম আছে। এই যে ট্রাফিক জ্যামে আমরা কত সময় বসে থাকি, তার হিসাব নেই। পরিচ্ছন্ন, জ্যামমুক্ত একটি মানবিক শহরের জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিকল্প রাজধানী গড়ে তোলা যেতে পারে। ’

Check Also

আবারও ডি এ তায়েবের নায়িকা মাহি

নতুন আরও একটি সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহি। সেই সিনেমার নাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *