





জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজী আফসারী। যিনি রোজী সামাদ নামেও পরিচিত; প্রকৃত নাম শামীমা আক্তার রোজী।






তিনি ১৯৬৪ সালে অভিনয় শুরু করেন এবং ২০০৫ সালে তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র মুক্তি পায়।






শামীমা আক্তার রোজী ১৯৪৯ সালের ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।






২০০৭ সালের এই দিনে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার চলে যাওয়ার ১১ বছর আজ।
রোজীর চেয়ে আফসারী প্রায় ২০ বছরের ছোট ছিলেন, তাদের প্রেম কাহিনী সবাইকে অবাক করবে! প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজী আফসারীর সঙ্গে প্রণয়-পরিণয়ের এমন মধুর স্মৃতিচারণ করছিলেন প্রখ্যাত নির্মাতা মালেক আফসারী। রোজীর চেয়ে আফসারী প্রায় ২০ বছরের ছোট ছিলেন। প্রেম থেকে বিয়ে, তাদের ২৭ বছরের সম্পর্কে কখনও তিল পরিমাণ ফাটল ধরতে পারেনি কেউ। ‘জীবন থেকে নেয়া’ খ্যাত অভিনেত্রী রোজীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়ও তার পাশে ছিলেন আফসারী।
মধুর স্মৃতিচারণ করে প্রখ্যাত নির্মাতা মালেক আফসারী বলেন,‘আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো পাঁচ বছরের। এই সময়টায় আমি তাকে না হলেও পাঁচ হাজার বার বিয়ের কথা বলেছি। কিন্তু সে কিছুতেই রাজি ছিলো না। অথচ হুট করেই সে একদিন আমাকে বিয়ে করে ফেললো। এমন আচমকা ব্যাপারটা হয়েছে যে, বিয়ের এক ঘণ্টা আগেও জানতাম না রোজীকে বিয়ে করছি।’
আলাপে বিয়ের স্মৃতিটা হৃদয়পটে ভেসে ওঠে আফসারীর, “দিনটি ছিলো ১৯৮৫ সালের ১৮ জুন। প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালে রোজী কল দেয় আমাকে। কল রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার সাদা পাঞ্জাবি আছে?’ ‘আছে। কিন্তু কেন?’ ‘দ্রুত মগবাজার এসে আমাকে কল দাও। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি’।”
আফসারী তাকে ডাকার কারণ বারবার জিজ্ঞেস করার পরও রোজী কিছু বলেননি। তখন মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়নি। তাই শহরের বিভিন্ন স্থানে রাখা টেলিফোন বুথ থেকে ‘পয়সা’ ব্যবহার করে রোজীর বাসার ল্যান্ডফোনে কল দিতেন আফসারী। রোজীর ডাকে মহাখালীর বাসা থেকে দ্রুত মগবাজার পৌঁছান তিনি।
সেখানে একটি হাসপাতালের টেলিফোন বুথে রোজীকে কল দেন আফসারী।
তার ভাষ্যে, “তখন সে আমাকে বললো, ‘মগবাজার কাজী অফিসে চলে আসো’। ঠিক তখনই আমি বুঝতে পারি আমাদের আজ বিয়ে। অথচ এক ঘণ্টা আগেও জানতাম না রোজীকে বিয়ে করছি।”
রোজী ও আফসারীর সম্পর্কের শুরু ১৯৮০ সালে ‘বিনি সুতার মালা’ ছবির সেটে। ঢাকার পাশে দোহারের কলাকোপায় ছবিটির দ্বিতীয় লটের শ্যুটিং চলছিলো।
এই ছবির নায়িকা ছিলেন রোজী। আর সহকারী পরিচালক ছিলেন মালেক আফসারী।
হৃদয়গ্রাহী সেই বিকেলটির দৃশ্য আজও আফসারীর স্মৃতিপটে ভাসে, ‘শ্যুটিং শেষ করে একা একা রোজী পুকুর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখছিল। আমি অনুমতি নিয়ে তার পাশে বসি। তখন প্রচণ্ড শীত ছিলো, আমি কাঁপছিলাম। সেটি দেখে রোজী তার গায়ের শাল খুলে আমাকে পরিয়ে দিলো। তখন আমার প্রতি তার অন্যরকম একটি টান অনুভব করলাম। কথা বলতে বলতে দু’জন দু’জনের মনের খুব কাছে চলে গেলাম।’
‘এরপর আমাদের সম্পর্কের সীমা বাড়তে থাকে। নিয়মিত কথা বলা, দেখা করা চলতে থাকে। এভাবে চলে যায় ৫ বছর। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিলো এতো দীর্ঘ সময়েও কেউ কাউকে কখনো একবারে জন্যও ‘তোমাকে ভালোবাসি’ কথাটা বলিনি’।
বাংলাদেশি সিনেমার ‘সুবর্ণ যুগ’ খ্যাত সময়ে তিনি জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। তার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সূর্য গ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম, জীবন থেকে নেয়া, তিতাস একটি নদীর নাম। তার অভিনয় ব্যাপক দর্শক নন্দিত হয়। তার অনন্য উপস্থিতি প্রায়ই ছায়াছবির প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল।
১৯৬২ সালে আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত জোয়ার এলো দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু। তবে প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত আলোর মিছিল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। প্রায় ৪ দশক ধরে তিনি প্রায় ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
এর মধ্যে পাকিস্তানের ‘জাগে হুয়া সাবেরা’, ‘পুনম কি রাত’সহ প্রায় ২৫টি উর্দু ছবি রয়েছে। তার অন্যান্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ওরা ১১ জন, লাঠিয়াল, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, অশিক্ষিত, প্রতিকার ইত্যাদি। তার সর্বশেষ অভিনীত ছবি ‘পরম প্রিয়’ ২০০৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল।