





’একসময় পুরান ঢাকার মানুষ আমাকে ভয় পেত। সবাই আমাকে দুলু গুণ্ডা নামে চিনত। এলাকায়






কোনো নাটক হলে আমাকে ভাড়া করা হতো তা নষ্ট করার জন্য। দেখা গেল, নাটক শুরু হয়েছে আর






আমি পাশে দাঁড়িয়ে পচা ডিম মারছি। ভয়ে আমাকে কেউ কিছু বলতেও পারত না। পুরান ঢাকার দুলু






গুণ্ডাই আজকের নায়ক ফারুক।’ এনটিভি অনলাইনের কাছে এভাবেই নিজের ফেলে আসা জীবনের






কথা বলছিলেন আকবর হোসেন পাঠান, যাকে সবাই নায়ক ফারুক নামেই চেনেন। তিনি এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬-এর আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন। এ উপলক্ষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। মঞ্চে শুধু ডিমই ছুড়েছেন, না কাজও করেছেন—জানতে চাইলে ফারুক বলেন, ’হ্যাঁ, একসময় আমাকে নাটকে নিতে বাধ্য হয় নাটকের লোকজন। তবে আমার কাজ মঞ্চে ছিল না। আমি যখন নাটকে পচা ডিম মারতাম, তখন তারা বুঝতে পারে আমার সহযোগিতা দরকার। যাঁরাই নাটক করেন, সবাই আমার কাছে চলে আসতেন এবং তাঁদের দলে কাজ করতে বলতেন। নাটক শুরু হওয়ার আগে ও পরে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হতো গেটে। যাঁরা অনুষ্ঠান দেখতে আসতেন, তখন আমি গেটে দাঁড়িয়ে সবাইকে স্বাগত জানাতাম। কিন্তু আমার কাজটি করতে ভালো লাগত না। তারপরও সবার অনুরোধে করতে হতো।’
চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে নায়ক ফারুক বলেন, “চলচ্চিত্রে আমি আসলে এসেছি আশ্রয় নেওয়ার জন্য। কারণ, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত। আমার নামে ৩৭টি মামলা, সে সময় আমার কাছের বন্ধুরা আমাকে বুদ্ধি দেয়, আমি যেন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি, তাহলে মামলা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাব। তখন আমাকে পরিচালক এইচ আকবর সাহেব নবাবপুর রোডে একটি হোটেলে নিয়ে যান এবং আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন সবার সঙ্গে। আমার নাম বদল করা হয়, নতুন নাম দেওয়া হয় ফারুক। প্রথম ছবির নাম আমার মনে নেই। তবে প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবিটি ছিল ’জলছবি’। নবাবপুর রোডটি আসলে আমাদের কৃষ্টি-কালচারের আঁতুরঘর।”
রুপালি জগৎ থেকে প্রাপ্তি নিয়ে ফারুক বলেন, “আমি যা পেয়েছি, তার পুরোটাই চলচ্চিত্র থেকে। দেশের প্রয়োজনে রাজনীতি করেছি। আমার মনের ভালো লাগা থেকে চলচ্চিত্র করেছি। আমার প্রথম ছবিটি মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধের সময়। তখন আর সিনেমা হলের খবর নেওয়ার সময় ছিল না। চারদিকে যুদ্ধ, আর আমরা মুক্তিযোদ্ধা। টানা নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। আবার শুরু হলো চলচ্চিত্রে কাজ, তাও কিন্তু যুদ্ধের ছবি দিয়ে। ছবির নাম ’আবার তোরা মানুষ হ’ ও ’আলোর মিছিল’। তারপর থেকে আমি চলচ্চিত্রেই নিজের জীবন খুঁজে পেলাম। যদিও মামলা থেকে রেহাই পেতে আমি চলচ্চিত্রে এসেছিলাম। কিন্তু আসার পর মনে হয়েছে, আমরা জন্ম বোধ হয় এটির জন্যই হয়েছিল। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধুই চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে গেছি।”
ফারুক আরো বলেন, ’আমি এখন চলচ্চিত্রে কাজ করছি না, কারণ এখন আমার কাছে কেউ গল্প নিয়ে আসছেন না। আর নিজেই চলচ্চিত্র প্রযোজনা করতে চাই, তার আগে সরকারের সহযোগিতা চাই। আমাদের দেশের সিনেমা হলের কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো যেন সমাধান করে দেন। এখন প্রায় প্রতিদিনই এফডিসিতে আসি, এখানে এলে মনে হয় নিজের ঘরে এসেছি। আমি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত চলচ্চিত্র নিয়ে থাকতে চাই।’