





বাঙালি অভিনেত্রীদের কদর বহু আগ থেকেই রয়েছে বলিউডে। বিশেষ করে কলকাতার অভিনেত্রীদের।






তাঁদের মধ্যে কেউ বাংলার বুকে তারকা হয়ে বলিউডে পাড়ি জমিয়েছেন, আবার কেউ বলিউডেই






তারকা হয়ে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করছেন। সেই সূত্রে কয়েকজন বাঙালি শিল্পী নিজের জীবনসঙ্গী






হিসেবে বেছে নিয়েছেন অবাঙালি বলিউড তারকাকে। দেখা যাক কারা রয়েছেন সেই তালিকায়-






রাখি গুলজার
বলিউডের প্রখ্যাত গীতিকার গুলজারের স্ত্রী রাখি গুলজার। দেশভাগের সময় ১৯৪৭ সালে কলকাতার রানাঘাট এলাকায় এক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে জন্ম রাখির। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশের একজন জুতা ব্যবসায়ী। স্কুলে পড়া অবস্থাতেই বাঙালি সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্দেশক অজয় বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে হয় রাখির। কিন্তু সে বিয়ে বেশীদিন টেকেনি। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বলিউডে পাড়ি দেন রাখি। কারণ বাংলা ছবিতে তিনি সুযোগ পাননি। বলিউডে নামী দামী নায়কদের নায়িকার ভূমিকায় রাখি হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। একসময় কবি এবং গীতিকার গুলজারের সঙ্গে পরিণয়ে আবদ্ধ হন। আজও নাকি তিনি গুলজারের গান ও কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা।
মধুরিমা নিগম
স্বপ্নের গায়ক সনু নিগমের সঙ্গে কলকাতার মেয়ে মধুরিমা নিগমের প্রথম দেখা হয় একটি রিয়্যালিটি শো-তে। এরপর পরিচয়, যোগাযোগ। কলকাতা থেকে মুম্বাইতে তাঁদের কথা চলল দূরভাষে, মাঝেমাঝে সাক্ষাতে। মধুরিমার সঙ্গীত প্রতিভায় উত্সাহ দিতে লাগলেন সনু। ধীরে ধীরে প্রেম, এরপর পরিণয়। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাঁকজমক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিয়ে হয় সনু-মধুরিমার। এরপর সম্ভাবনাময় গায়িকা মধুরিমা আর গান গাইলেন না। কেন? সনু নাকি তাঁকে বলেছিলেন সংসারে মনোযোগ দিতে। প্রেম এমনই বিষম বস্তু, তাতেই রাজি হয়ে ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিয়ে মধুরিমা এখন সনুর ঘরণী, এক পুত্র সন্তানের জননী।
জয়া বচ্চন
ভারতের মধ্য প্রদেশের এক বাঙালি পরিবারে ১৯৪৮ সালের ৯ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন জয়া বচ্চন। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে সত্যজিত্ রায়ের `মহানগর` ছবিতে অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্রে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ভর্তি হন পুনের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। ফিল্ম ইনস্টিটিউটের উজ্জ্বল ছাত্রী জয়া ভাদুড়িকে আর থেমে থাকতে হয়নি। পাস করে বেরিয়ে ১৯৭১ সালে হৃষিকেশ মুখার্জির `গুড্ডি` দিয়ে শুরু হয় তাঁর জয়যাত্রা।
জয়া যখন বলিউডের নতুন ধারার অভিনয়ের তারকা, তখন বলিউডে কঠোর সংগ্রাম চালাচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। সেই সময়ই অমিতাভের পাশে দাঁড়ালেন জয়া। ’বংশী বিরজু` এবং `এক নজর`-এর মতো ছবিতে অমিতাভের নায়িকা হতে রাজি হলেন। ছবি ফ্লপও হল। কিন্তু তাতেও দমলেন না। অমিতাভের প্রতিভার ওপর তাঁর বরাবরই ভরসা ছিল। পরিচালক প্রকাশ মেহরার `যাঞ্জীর`-এর প্রস্তাব যখন দেবানন্দ থেকে শুরু করে বিনোদ খান্নাও প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন, তখন অমিতাভ বচ্চনের নাম প্রকাশ মেহরাকে জানিয়েছিলেন স্বয়ং জয়া। বাকিটা তো ইতিহাস। এরপরই ১৯৭৩-এ বিয়ে করেন অমিতাভ-জয়া। দুই সন্তানের জননী পেশা থেকে অবসর নিয়ে মন দেন সংসারে। `কুলি` ছবিতে অমিতাভের অ্যাক্সিডেন্ট থেকে শুরু করে, অমিতাভ-রেখার স্ক্যান্ডাল, অমিতাভের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, সব কিছুতেই পাশে ছিলেন জয়া বচ্চন। এখনো আছেন। সেই সঙ্গে আছেন ভারতের মূলধারার রাজনিতিতেও।
রানী মুখার্জী
বাঙালি পরিচালক রাম মুখার্জি ও কৃষ্ণা মুখার্জির মেয়ে রানীর জন্ম ১৯৭৮ সালে। বাবার পরিচালনায় রানীর প্রথম ছবি ’বিয়ের ফুল’ মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার তারকা অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্রোপাধ্যায়। সেই বছরই `রাজা কি আয়েগি বারাত` ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন রানী। এরপর `গুলাম`, `কুছ কুছ হোতা হ্যায়`-এর পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ধীরে ধীরে বলিউডের সবচেয়ে সম্মানজনক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান `যশরাজ`-এর নির্ভরযোগ্য নায়িকা হয়ে উঠলেন। যশ চোপড়ার বড় ছেলে আদিত্য চোপড়ার সঙ্গে শুরু হয় তাঁর প্রেমের অধ্যায়। বিবাহিত আদিত্যর ব্যক্তিগত জীবন তখন টালমাটাল, রানীর শুভানুধ্যায়ীরা এই প্রেমে সমর্থন জানাচ্ছেন না। কিন্তু রানী অটল। আদিত্যর পাশে থেকে তাঁকে প্রেরণা দিয়ে গেছেন সবসময়। যশ চোপড়ার মৃত্যুর পর, যশরাজ ব্যানারের হাল ধরেছেন আদিত্যর সঙ্গে। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইতালিতে ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল আদিত্যর সঙ্গে বিয়েটাও সেরে ফেলেন। এরপর থেকে সিনেমা থেকে দূরে সরে সংসার ও স্বামীর সঙ্গে ব্যবসায় মনযোগী হন রানী।
বিপাশা বসু
কলকাতায় বেড়ে ওঠা এই তারকা ১৯৯৬ সালে সুপারমডেল খেতাব জেতার পর বলিউডের হাতছানি এড়াতে পারলেন না। ২০০১ সালে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে `আজনাবী` ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের নজর কাড়েন তিনি। একের পর এক ছবি, আর জন আব্রাহামের সঙ্গে রোমান্স, বিপাশা তখন খবরের শিরোনামে। কিন্তু জনের সঙ্গে প্রেমটা টিকলোনা বেশীদিন। ২০১৫ সালে `অ্যালোন` ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে বিপাশার পরিচয় করণ সিং গ্রোভারের সঙ্গে। এই ছবির মাধ্যমেই টেলিভিশনের অভিনেতা করণ প্রথম চলচ্চিত্রে পা রাখেন। দু’টি বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসা করণ প্রেমে পড়লেন বিপাশার। সাড়া দিলেন বিপাশা। এরপর ২০১৬ সালে দু’জন বিয়ে করে বাঁধলেন বাসা।